ঝাড়গ্রাম সংবাদ ২০২৩

*শিল* *কাটাওওও* , *শিল* *কাটাওওও* ।"

posted on 2023 May 02


দক্ষিন কলকাতার রাস্তায় সচরাচর শোনা যায় না এই আওয়াজটি। উত্তর কলকাতার ভাড়াবাড়ি ত্যাগ করে আবিররা যেদিন দক্ষিন কলকাতার দুই কামরার ফ্ল্যাট বাড়িতে আসল, তখন আবিরের পঞ্চাশোর্দ্ধ বয়সি মা সুমিতা পড়ল মহা বিপাকে। উত্তর কলকাতায় মানুষের কৌতুহলী মনোভাব, সুখে-অসুখে পাশে থাকা, এপাড়া-ওপাড়ার কুটকচালি তাকে ব্যস্ত রাখত সর্বদা। আর এখানে মানুষ অন্য মানুষের সাথে বিশেষ কোনো দিন ছাড়া কথা বলে না।
সুমিতা “শিল কাটাওওও" শুনে নিজের খুশি আর ধরে রাখতে পারল না। প্রায় একবছর হয়ে গেল শিলটা কাটানো হয়নি। স্বামী-ছেলের শতবার বলা সত্ত্বেও সুমিতা মিক্সি ব্যবহার করে না।
“শিল কাটাওওও, শিল …"
“এই শিল, একটু উপরে এসো না?"
“শিল কাটাওওও" ডাক বন্ধ হল। একজন শীর্ণ বুড়ো লোক হাতে চটের ব্যাগ ঝুলিয়ে তাকাল চারদিকে। দেখতে পেল তিনতলার বারান্দা থেকে তার ডাক পড়েছে।

সিঁড়ি বেয়ে উঠে এসে বুড়োটি বসে পড়ল তিনতলায় সিঁড়ির ঠিক কাছটায়। সুমিতা তাকে অনুরোধ করে ভেতরে আসতে বললে প্রথমে সংকোচ করলেও সে সুমিতার অনুরোধ ফেলতে পারল না। সুমিতা শিল আর নোড়া এনে দিলে জল ছিটিয়ে নিপুন হাতে তাতে করতে লাগল নকশাকাটা কাজ। মনে হল লোকটা কথা বলতে জানে না, হাতেই তার কথা বেরোয়। “এই নিন মা। দেখুন ঠিক হয়েছে কিনা।"

সুমিতা হাত বাড়িয়ে নিল সদ্য নকশাকাটা শিল আর নোড়া। বুড়ো লোকটি তার জিনিসপত্র ব্যাগে গুছিয়ে অপেক্ষা করছে টাকার জন্য। দেখতে পেল সুমিতা নিয়ে এল একটি প্লেটে করে দুটি লাল বাতাসা আর এক গ্লাস জল। একটু অবাক হল লোকটি এই ভেবে যে, তার পারিশ্রমিক যদি এটা হয় তাহলে তো তার এতক্ষণের কষ্ট বৃথা যাবে।" “আচ্ছা, তোমার মজুরি কত?"-সুমিতা এগিয়ে দিল বাতাসার প্লেট আর জল।

আশ্বস্ত হল লোকটি। সে তার মজুরি জানিয়ে খেতে লাগল বাতাসা আর জল। মনে মনে আশীর্বাদ জানালো সুমিতাকে। সকালের জলখাবারের খরচ বেঁচে গেল তার। মজুরি মিটিয়ে সুমিতা বলল –“আবার ঠিক তিনমাস পরে এসো। তোমার কাছেই কাটাবো কিন্তু"।
শীর্ণকায় বুড়ো লোকটি মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।

এরপর মাঝে মাঝেই সুমিতা “শিল কাটাও, শিল কাটাও" শুনতে পায়। ডাক পেলেই বারান্দায় এসে দেখতে পায় বুড়ো লোকটিকে। শেষপর্যন্ত যতদূর দেখা যায় দেখতে থাকে। ঠিক তিনমাস পরে লোকটি নিজেই বেল বাজিয়ে শিলটা কাটিয়ে দিয়ে চলে গেল। খেয়ে গেল বাতাসা আর জল।
পরেরদিন একইভাবে সুমিতা “শিল কাটাও" ডাকের অধির অপেক্ষায় বসে থেকেও ডাকটি শুনতে পেল না। একইভাবে কেটে গেল একমাস। নাঃ, পাচ্ছে না তো সেই বিকৃত গলায় “শিল কাটাও, শিল কাটাও?" তাহলে কি কিছু হল বুড়ো মানুষটার? প্রতিদিনের শিল-নোড়ায় মশলা বাটা মনে করিয়ে দিতে লাগল তাকে মানুষটার কথা।
.

“শিল কাটাওও, শিল কাটাওওও"।
আরো প্রায় দুমাস পর সুমিতা শুনতে পেল এই ডাক। ছুটে গেল বারান্দায়। খুঁজে পেল না হাতে চটের ব্যাগ নিয়ে চলা বুড়ো লোকটাকে। রাস্তার এদিক-ওদিক খেয়াল করার পর দেখল একটি ত্রিশ-বত্রিশ বছর বয়সি ভালো স্বাস্থ্যের ছেলে “শিল কাটাও" ডাক দিতে দিতে যাচ্ছে। সুমিতা তাকে ডাকবে মনস্থির করতেই দেখতে পেল সেই ছেলেটি ঢুকছে তাদের বিল্ডিংএর গেট দিয়ে। ফ্ল্যাটের বেল বাজার পরে সুমিতা দরজা খুলতেই শুনতে পেল হাসি হাসি মুখ করে ছেলেটি তাকে বলছে “মা, আপনার শিল কাটানোর সময় হয়ে গেছে না?"
একটু অবাক হল সুমিতা। বলল- “হ্যাঁ, কিন্তু আমার শিল-নোড়া তো একজন বয়স্ক মানুষ কেটে দিয়ে যায়। অনেকদিন আসছে না।"
“মা, আমি তারই ছেলে। বাবা তো আর আসবে না?"
বুকটা একটু ধড়াস করে উঠল সুমিতার। বলল –“কেন? কি হয়েছে তার?"
হাসল ছেলেটি। বলল-“কিছু হয়নি মা। আমার বাবা কাজ থেকে ছুটি নিয়েছে।
সুমিতার মনটা দমে গেল একটু। বলল –“ওঃ, তার বদলে তুমি কাজ করবে?"
“না মা। শুধুই আপনার বাড়িটা করব। আজকাল আর কতজন শিল-নোড়া কাটে? কিন্তু, বাবা বলল আপনি নাকি ভালোবাসেন শিল-নোড়াকে। তাই শুধু আপনারটাই করে দেব। আর সেদিন যদি আর কেউ ডাকে তো তাদেরটাও করে দেব।"
সুমিতা একটু অবাক হল। বলল –“তাতে তোমার, বাবার চলবে কি করে?"
ছেলেটি আবার হেসে ফেলল - “শিল-নোড়া কেটেই বাবা সংসার চালাত আর মা লোকের বাড়ি কাজ করে। নিজেরা কিছু না খেয়ে আমার মুখে খাবার তুলে দিত যাতে আমি পড়াশোনা করে মানুষ হতে পারি। গ্রামের পৈত্রিক ভিটে *বিক্রি* করে আমাকে *মাস্টার* *ডিগ্রি* পর্যন্ত পড়াল। আমি কিছুমাস আগেই রেলে চাকরি পেয়েছি। এতবছর যাদের চোখের সামনে মুখে রক্ত তুলে খাটতে দেখেছি, তাদের কি আবার এত পরিশ্রমের কাজ করতে দেখলে ভালো লাগে? আর এখন তো তাদের বিশ্রামের সময়।"
সুমিতা ছেলেটিকে ঘরে ডাকল। ছেলেটি বসে পড়ল দোরগোড়ায় ঠিক তার বাবার মতন। সুমিতা শিল আর নোড়া এনে দিলে টের পেল রক্ত কথা বলছে। কাজ শেষ হয়ে গেলে সুমিতা তাকেও একটি প্লেটে বাতাসা আর এক গ্লাস জল এগিয়ে দিলে সে ঠিক তার বাবার মতন আয়েশ করে বাতাসা খেয়ে ঢকঢক করে জল খেয়ে নিল।
যাওয়ার আগে বলল –“তাহলে মা আসি? আবার ঠিক তিনমাস পরে আসব।"
সুমিতা বলল –“তুমি রেলে চাকরি পেয়েও শিল কাটছ কেন? এতে তো তোমার সম্মানে লাগতে পারে।"
“মা, এই *শিল* *কাটানোটাই* তো *আমাকে* *পড়িয়েছে* , *রেলে* *চাকরি* দিয়েছে। আর রেলে তো আমরা সরকারের চাকর। সেখানে সরকার আমাদের শুধু টাকা দেয়। আর আপনি টাকাও দিলেন আবার ভালোবাসাও দিলেন। তাহলে কোনটা সম্মানের বলুন মা? আর বাবা বলে, শিল কাটানোটা বাঙালি রন্ধনশিল্পের ঐতিহ্য। মশলা পাথরের সঙ্গে মিশে একটি অপূর্ব গন্ধ তৈরী করে যা রান্নার গুণ আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই আপনার মতন কিছু মানুষ যতদিন আছেন ততদিন আমরাও আছি। আর বাবার শিল্পী গুণকে মর্যাদা ছেলে ছাড়া আর কে দেবে বলুন?"
মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল সুমিতা। ছেলেটি আজ্ঞা নিয়ে দ্রুতপায়ে নেমে গেল সিঁড়ি বেয়ে। দরজা বন্ধ করে সুমিতা ধীরপায়ে গেল বারান্দার দিকে।
“শিল কাটাওওও, শিল কাটাওও, শীল কাটাওওও, শীল কাটাওওও" ডাকটা কি আর বাঙ্গালী শুনতে পাবে আর কিছু বছর পরেও?'
**গল্প টি কার লেখা জানি না। ভালো লাগলো share করলাম
@সংগৃহীত

মিজোরামের গল্প: পর্ব এক (সাল: ২০১৫)



কোনরকম পরিকল্পনা ছাড়াই পুজোর ঠিক পরে আইজল! আর পৌঁছেই একেবারে সোজা সুমো স্ট্যান্ড! পরিচয় হল লালা নামের একজন ড্রাইভারের সাথে। বেশ ফ্রেন্ডলি মানুষ। কথা দিলেন যে রাত দশটার মধ্যে ঠিক পৌঁছে যাব চম্ফাই। চেপে পড়লাম ওনার গাড়িতে। ছাড়ার কথা ছিল দুপুর দুটোয়। আড়াইটা নাগাদ ছাড়লো গাড়ি। আর তারপর যতো কাণ্ড! লালার গাড়ি চালানো দেখে আমার নিজের কলেজ জীবনের কথা মনে পড়লো। আমি যেমন সেমেস্টার এক্সামের আগের রাতে পড়াশুনা করতাম, লালার গাড়ি চালানো ঠিক সে রকম: দশ মিনিট কাজ করো আর তারপর পনের মিনিটের বিশ্রাম! গাড়িতে দেখি সবারই, এমনকি মহিলাদেরও, ২০-৩০ মিনিট অন্তর বাথরুম করার তাগিদ। খানিক তাজ্জব্ বনলাম বটে। কিন্তু বাকি কারও দেখলাম এই দেরি নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তা নেই। আমিও তাই যাকে বলে একদম 'চিল '!

চম্ফাই যখন পৌঁছলাম তখন বাজে রাত সাড়ে বারোটা। লালা আর ওর বন্ধু জেরুয়া (ও একই সুমোতে ছিল) খুব চেষ্টা করলো একটা হোটেলের লোকজনকে ঘুম থেকে তোলার। কিন্তু কারও কোনও সাড়া পাওয়া গেলো না। হোটেলে চারপেয়ে বন্ধুরাও ছিল - কিন্তু তারাও একবার ঘাড় ঘুরিয়ে আমাদের দেখে কোনও পাত্তা না দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল! অগত্যা লালা, জেরুয়া, একজন স্থানীয় মধ্যবয়স্ক মানুষ আর আমি গাড়িতেই শহরে পাক খেতে থাকলাম। প্রথমে আমরা বাড়ি-বাড়ি কিছু মালপত্র পৌঁছে দিলাম। তারপর শুরু হল বাকিদের 'পার্টি '! পাঁচ মিনিট করে গাড়ি চলছে আর তারপর দশ মিনিটের 'ড্রিঙ্কস ব্রেক'! চম্ফাই শহরের ঠিক বাইরেই এই রাজ্যের একমাত্র 'বৃহৎ সমতলভূমি'। আকাশজুড়ে উজ্জ্বল তারাদের লুকোচুরি ফেটে চাঁদের রোশনাই। সামনে সুবিস্তৃত ধানক্ষেত। আর তার গায়ে চকচক করছে চাঁদের মায়াবী আলো। পাশের মেঠো রাস্তার ধুলো কেটে ছুটে চলেছে আমাদের গাড়ির হেডলাইট। সেই মাতাল রাতের ছবির নেশা আজও কাটেনি আমার।
মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোককে বাড়ি পৌঁছে শেষমেষ আমরা যখন জেরুয়ার বাড়ির কাছে পৌঁছলাম তখন রাত আড়াইটা। সুমোর ছাদ থেকে বাকি মালপত্র গাড়ির মধ্যে চালান করলাম। জেরুয়ার স্ত্রী মাসাঙ্গি আমাদের চা বানিয়ে খাওয়ালো। শেষমেষ ওদের একটা লম্বা চেয়ারে যখন শুতে গেলাম তখন তিনটে বেজে গেছে।
পরদিন সকালে মাসাঙ্গির ছেলে ভ্লা আমাকে ঘুম থেকে তুললো। ও বেশ পটাপট ইংরেজি বলে। তাই আমার বেশ সুবিধে। গ্রামটা ঘুরিয়ে দেখালো। জেরুয়া বা লালার দেখা পাওয়া গেলো না কোথাও! মাসাঙ্গি আবার গরম চা বানিয়ে খাওয়ালো। আমাকে বললো জলখাবারের জন্য অপেক্ষা করতে। কিন্তু আমি তো আগেরদিন গাড়িতে বসেই আজকের জন্য প্ল্যান বানিয়ে ফেলেছি। তাই অমন লোভনীয় প্রস্তাবের হাতছানি কাটিয়ে বেরিয়ে পড়লাম শহরের দিকে। আজকের গল্প পরের কিস্তিতে।

ছবিতে লাজুক ভ্লা এবং ওর মা মাসাঙ্গি

Mizoram Diaries - Day 1:



Reached Aizawl without any plans and headed straight to the Sumo stand. Lala, a friendly Mizo driver, in his hardly understandable Hindi, promised to take us to Champhai by 10pm and I took his 2pm Sumo which started at 2:30. And then there was comedy! Lala’s approach to driving is very similar to what my approach to studying Civil Engineering the night before exam was. They both follow the pattern of 10 minutes of actual work followed by 15 minutes of break! Everybody, even the ladies in the Sumo, wanted to answer to nature’s call every 20-30 minutes. And nobody seemed to mind the delay. Not even me.

By the time we reached Champhai it was 12:30. Lala and his friend Jerua - who was in the same Sumo - tried to wake up the workers of a hotel. No one responded to them. Not even the dogs! Jerua, Lala, a middle-aged man and I then started our tour of this small hilly town of Champhai in the Sumo. First we delivered some shipments at some houses. And then they started drinking! They will drive for about 5 minutes and then take a 10-minute drinks break! On the outskirts of Champhai is the only ‘large plane’ in this hilly state. The sky was starry and the bright moonlight was reflecting off the abundant paddy on the field in the valley as we drove on the dusty road next to it. The middle-aged man was dropped at his home and when we finally stopped next to Jerua’s house it was already 2:30. We shifted the rest of the shipments from the roof of the Sumo to its seats. Jerua’s wife Masangi made hot tea for us and finally when I rested on the couch it was well past 3am.

Masangi's son Vla, who speaks decent English, woke me up in the morning and showed me around their village. Jerua and Lala were nowhere to be seen. Masangi again made tea for me and invited me to wait till breakfast. I could not, as I did already have a plan for the day (more about it later) and rushed to the town centre.

In this photo: a very photo-shy Vla and Masangi at their home.